হজ ও উমরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বায়তুল্লাহ

হজের বিধান হযরত আদম আ. থেকে চলে আসছে। যেদিন বায়তুল্লাহর ভিত্তি রাখা হয়েছে সেদিন থেকেই এর তাওয়াফ ও যিয়ারত শুরু হয়েছে। কোন দিন বন্ধ হয়নি আর বন্ধ হবেও না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে এ ঘর বহুবার বিধ্বস্ত হয়েছে এবং তা পুণঃনির্মাণ করা হয়েছে। হযরত নূহ আ.-এর মহাপ্লাবনের সময় এর কোন চিহ্নও ছিল না। আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে ইবরাহীম আ.-কে এ স্থান চিহ্নিত করে দিলে তিনি আল্লাহ’র নির্দেশে তা পুণঃনির্মাণ করেন। এরপর আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আ.-কে বললেন, তুমি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা করে দাও। ইরশাদ হচ্ছে:

وَأَذِنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَ عَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ
“লোক সমাজে হজের ঘোষণা করে দাও, তারা পদব্রজে এবং দূর্বল উষ্ট্রীতে চড়ে দূর-দূরান্ত হতে এসে হাজির হবে।” (সূরা হজ্জ: ২৭)

আরাফার ময়দান

হজ্জ কি?

হজ্ব বা হজ্জ (আরবি: حج) মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত। এটি ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্ব সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক। আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজের জন্য নির্ধরিত সময়। হজ পালনের জন্য বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরী এবং সন্নিহিত মিনা, আরাফাহ, মুযদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন এবং অবস্থান আবশ্যক

অন্য দিকে , জিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা গৃহ তাওয়াফ করাকে হজ্জ বলে।

কাবাঘর জিয়ারত

ওমরাহ কি?

ওমরাহ শব্দের অর্থ জিয়ারত করা, পরিদর্শন করা ও সাক্ষাৎ করা। পবিত্র কাবাগৃহের জিয়ারতই মূলত ওমরাহ। ইসলামের ভাষায় পবিত্র হজ্জের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরাহ বলা হয়। আর এটিই পৃথিবীর একমাত্র ভ্রমণ যার জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে প্রতিদান ও বরকত।

হজ্ব কখন ফরজ হয়

হজ্ব কোন সালে ফরজ হয়েছে এ ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। কারো কারো মতে, পঞ্চম হিজরীতে। কারো কারো মতে, ষষ্ঠ হিজরীতে, কারো কারো মতে দশম হিজরীতে। শেষের দুইটি অভিমত অপেক্ষাকৃত শুদ্ধ। অর্থাৎ হিজরী নবম সালে অথবা দশম সালে হজ্ব ফরজ হয়েছে। দলিল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বাণী- وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا (অর্থ- আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।) এ আয়াতের ভিত্তিতে হজ্ব ফরজ হয়। এই আয়াতে কারীমা আমুল ওফুদ (প্রতিনিধিদল আগমনের বছর) তথা নবম হিজরীর শেষ দিকে নাযিল হয়েছে। অতএব, নবম হিজরীর শেষ দিকে হজ্ব ফরজ হয়েছে। দেখুন (যাদুল মাআদ, ৩/৫৯৫)।

হজ ফরজ হওয়ার শর্ত:হজ ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে।:
  1. মুসলিম হওয়া।
  2. বিবেকবান হওয়া, পাগল না হওয়া।
  3. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
  4. আজাদ বা স্বাধীন হওয়া—অর্থাৎ কারো গোলাম বা দাস না হওয়া।
  5. দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া।

হজ ফরজ হয়েছে কিনা যেভাবে জানবেন

কাবার চারদিকে তাওয়াফ

কুরআনের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব :

হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। তাই কারো ওপর জাকাত ফরজ না হয়েও তার ওপর হজ ফরজ হতে পারে। হজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো, জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে। হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রয় করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৫২; আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৫১৬) একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রয় করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৫৩) অনেকে মনে করে সন্তানের বিয়ে আগে দিতে হয়। তারপর হজ আদায় করতে হয়। অথচ এ কথা ইসলামসমর্থিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের বিয়েও খুবই জরুরি। তাই বলে সন্তানের বিয়ের জন্য হজে বিলম্ব করা যাবে না। (রহিমিয়া, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ২৭৬)

হাদিসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব:

হজ্জের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো- ইবনু ওমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন,

রাসূল সা. বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপরে প্রতিষ্ঠিত (১) তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা এ মর্মে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সা. তার বান্দা ও রাসূল (২) সলাত কায়েম করা (৩) যাকাত প্রদান করা (৪) হজ্জ সম্পাদন করা ও (৫) রামাযানের সিয়াম পালন করা’।

তোমরা হজ্ব ও উমরার মাধ্যমে এই (বায়তুল্লাহ) গৃহের উপকার গ্রহণ কর। কেননা তা ইতিপূর্বে দু’বার ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়বারের পর উঠিয়ে নেওয়া হবে। [সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৬৭১৮; মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১০৭২; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৬৫২]

Apply for an Umrah visa and experience the hassle-free journey to the city of Makkah.

Arrow